মাহাবুবুর রহমান ,কক্সবাজার :

আসছে ২ স্পেপ্টেম্বর শনিবার মুসলমানদের দ্বিতীয় প্রধান ধর্মীয় উৎসব প্রবিত্র ঈদুল আজহা। তাই হাতে আর বেশি সময় বাকি নেই, ইতি মধ্যে কক্সবাজারের আনাচে কানাচে শুরু হয়ে গেছে ঈদুল আজহার প্রস্তুতি আর এই প্রস্তুতির প্রধান আলোচনায় আছে পশু কেনা বেচা। বিশেষ করে গুরু কেনা বেচা নিয়ে আলোচনা সবার তুঙ্গে। এদিকে জেলা প্রাণী সম্পদ অফিসের দেওয়া তথ্য মতে এবার জেলায় ৮০ হাজারের বেশি পশু কোরবানি হবে। এর মধ্যে সিংহ ভাগই গরু। আর জেলার চাহিদা অনুযায়ী পশু মজুদ আছে কোন ধরনের ঘাটতি হবে না। এদিকে কোরবানির সময় বাজারে গরু বিক্রি করে কিছু লাভের আশায় দীর্ঘ দিন ধরে বাসাবাড়িতে বা খামারে গরু মোটাতাজা করে আসছিল অসংখ্য খামারী তবে বর্তমানে মন ভাল নেই তাদের। সম্প্রতী ভারত এবং মায়ানমার থেকে বেশি হারে গরু আসায় লোকসানের আশংকা করছে স্থানীয় খামারীরা। এদিকে টেকনাফের কয়েক জন ব্যবসায়ী বলেন সম্প্রতী মায়ানমারে দাঙ্গা হাঙ্গামা বেড়ে যাওয়ায় গরু আসা কমে গেছে, সামনে গরু আরো কম আসতে পারে। এদিকে কোরবানির সময় আইন শৃংখলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ব্যপক তৎপরতা শুরু করেছে কক্সবাজার জেলা পুলিশ।

কক্সবাজার জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ নজরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন চলতি বছর কক্সবাজারে প্রায় ৮০ হাজার থেকে বেশি পশু কোরবানি হতে পারে। এর মধ্যে ৮৭ % গরু আর বাকি গুলো মহিষ, ছাগল, উট ইত্যাদি। আর কক্সবাজারের চাহিদা অনুযায়ী পশু মজুদ আছে তাই কোন ধরনের ঘাটতি হবে না। আর কোরবানি পশু বেচাকেনা হাটে আমাদের ডাক্তার এবং মেডিকেল টিম থাকবে কোন অসুস্থ্য বা অন্য কোন গরু বাজারে আনলে আমরা তা চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। এদিকে কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে অনেকে দীর্ঘ দিন ধরে পশু লালন পালন করে আসছিল আবার অনেকে ২০/২৫ দিন বা ২ মাস আগে পশু কিনে ব্যবসার জন্য মজুদ করতে দেখা গেছে। পিএমখালী ইউনিয়নের স্লুইস গেইট এলাকার ফকির আহাম্মদ সওদাগর বলেন আমি কোরবানির ঈদের প্রতি বছর গরু বেচা কেনা করি আমার নিজের বাড়িতে ৪ টি গরু দীর্ঘ দিন ধরে দেশিয় পদ্ধতিতে মোটাতাজা করেছি আর সম্প্রতী টেকনাফ থেকে আরো প্রায় ১০ টি গরু কিনেছি এখন সে গুলোও নিজের বাড়িদে রেখে লালন পালন করছি উদ্দেশ্য কোরবারিন বাজারে বিক্রি করে কিছু লাভবান হওয়া। আর বর্তমানে গরুর খাদ্য এবং আনুষাঙ্গিক ব্যায় এত বেশি যে গরু পালন করা খুবই মুশকিল হয়ে পড়েছে। তবে এখন চিন্তা করছি আসলে বাজারে বিক্রি করে লাভবান হতে পারবো কিনা।

একই ইউনিয়নের ঘাটকুলিয়া পাড়ার মুক্তার আহাম্মদ বলেন আমি ১ বছর ধরে ১ টি বিরিষ গরু লালন পালন করছি এখন বাজারে বিক্রি করার অপক্ষেয় আছি, আমার গরুটি বাজারে ৮০ হাজার টাকার মত দাম পেলে বিক্রি করবো। তিনি বলেন প্রতিদিন গরুর খাদ্য, কিছু চিকিৎসা করাতে গিয়ে প্রচুর টাকা খরচ হয়েছে এখন যদি সঠিক দাম না পায় তাহলে সব কষ্ঠ পানিতে যাবে। তবে এখন যেভাবে শুনছি দেশে ভারতীয় এবং মায়ানমারের গরু আসছে সে কারনে আমরা স্থানীয় ছোট চাষিরা খুবই চিন্তিত।

রামু ফুলনিরচর এলাকার আবু বক্কর ছিদ্দিক বলেন আমরা ৩ জনে মিলে টাকা পূজি খাটিয়ে কয়েক মাস ধরে ২০ টির মত গরু কিনে লালন পালন করে কোরবানি ঈদের বাজারে বিক্রি করে কিছু বাড়তি আয় করার অপেক্ষায় আছি। ইতি মধ্যে প্রুত গরুর পেছনে আমাদের কিনা সহ প্রায় ৭৫ হাজার টাকার বেশি খরচ হয়ে গেছে তাই গড়ে ১ লাখ টাকার কমে বিক্রি করলে আমাদের পোষাবে না। তবে এখন আমরা খুবই চিন্তিত যে পার্শবর্তি দেশ ভারত ও মায়ানমার থেকে যে হারে গরু আসছে তাতে আমাদের অবস্থা সূচনীয় হতে পারে।

একই ভাবে রামু মেরুংলুয়ার হাফেজ আহাম্মদ বলেন আমাদের বহু পুরানো চাষাবাদের ব্যবসা, সে হিসাবে ১ বছর ধরে আমরা ঘরে দেশিয় পদ্ধতিতে ৩ টি গরুকে মোটাতাজা করিয়েছি সে হিসাবে গরুর পেছনে সার্বক্ষনিক শ্রম, অর্থ, সব মিলিয়ে যদি বাজার ভাল থাকে তাহলে কিছু টাকা লাভ হতে পারে। আর যদি বাজার ভাল না থাকে তাহলে লোকসান হতে পারে। জানিনা ভাগ্যে কি আছে।

এদিকে সদর উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা চন্দন কুমার নন্দ বলেন উপজেলায় অনেক খামারী বাসাবাড়িতে এবং অনেকে নির্দিস্ট স্থানে গরু লালন করে আসছে। আমরা প্রথম থেকেই একটি ভরসায় ছিলাম কোরবানির সময় গরুর সংকট হবে না। আামদের সেই লক্ষ্য ঠিকই আছে আসা করি গরুর কোন সংকট হবে না। আর খামারীদের ও হতাশ হওয়ার কিছুই নেই। আমার মতে এত বেশি আমনাদী হয় নি যে একেবারে স্থানীয় খামারীরা বেশি সমস্যায় পড়বে।

এদিকে টেকনাফ উপজেলার গরু ব্যবসায়ি আবু তাহের ও মকবুল আহাম্মদের সাথে যোগোযোগ করা হলে তারা বলেন আগে শাহপরীরদ্বীপ দিয়ে মায়ানমার থেকে গরু আসলেও সম্প্রতী মায়ানমারে দাঙ্গা হাঙ্গামা বেড়ে যাওয়ায় গরু আসা বন্ধ হয়ে গেছে। আমাদের মতে যদি সেখানকার পরিস্থিতি ভাল না হয় তাহলে খুব দ্রুত বেশি পরিমানে গরু আসার সম্ভবনা কম।

এদিকে কোরবানির সময় জেলার আইন শৃংখলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে কাজ করছে জেলা পুলিশ। এ ব্যাপারে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার ড.একেএম ইকবাল হোসেন বলেন কোরবানি সময়ে বেশি নগদ টাকা লেনদেন হয় তাই কিছু সুযোগ সন্ধানি অপরাধি এই সুযোগে অপরাধ করার চিন্তায় থাকে। তবে আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি আছে। প্রতিটি গরু বাজারে এবং রাস্তায় সার্বক্ষনিক পুলিশ থাকবে এছাড়া যে কোন পরিস্থিতি পুলিশের সহযোগিতা নেওয়া জন্য অনুরোধ জানান তিনি।